Tuesday, 14 June 2016

জার্মানির_ভাগ্যবিধাতা_হিটলারঃ The_Story_of_Hitler :

#জার্মানির_ভাগ্যবিধাতা_হিটলারঃ #The_Story_of_Hitler : হিটলার ১৯৩৩ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোট পেলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ হন। পার্লামেন্টের ৬৪৭টির মধ্যে তার দলের আসন ছিল ২৮৮টি। বুঝতে পারলেন ক্ষমতা অর্জন করতে গেলে অন্য পথ ধরে অগ্রসর হতে হবে। তাই কোনো দল সংখ্যাগরিষ্ঠ না হওয়ায় হিটলার পার্লামেন্ট ভেঙে দিলেন। এবার ক্ষমতা দখলের জন্য শুরু হলো তার ঘৃণ্য রাজনৈতিক চক্রান্ত। বিরোধীদের অনেকেই খুন হলেন। অনেকে মিথ্যা অভিযোগে জেলে গেল। বিরোধী দলের মধ্যে নিজের দলের লোক প্রবেশ করিয়ে দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা তৈরি করলেন। অল্পদিনের মধ্যেই বিরোধী পক্ষকে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে হিটলার হয়ে উঠলেন শুধু নাৎসি দলের নয়, সমস্ত জার্মানির ভাগ্যবিধাতা। হিটলারের নতুন আইন – ‘জেন্টিল ও জু’ হিটলার জার্মানির ত্রাণকর্তা হয়ে ওঠার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল ইহুদিদের বিরুদ্ধে তার প্রচার। তিনিই জার্মানদের মধ্যে ইহুদি বিদ্বেষের বীজকে রোপণ করেছিলেন। দেশ থেকে ইহুদি বিতাড়নই ছিল তার নাৎসি বাহিনীর প্রধান উদ্দেশ্য। দেশের প্রান্তে প্রান্তে ইহুদি বিদ্বেষ মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। শুরু হলো তাদের ওপর লুটতরাজ, হত্যা। হিটলার চেয়েছিলেন এভাবে ইহুদিদের দেশ থেকে বিতাড়ন করবেন। কিন্তু কোনো মানুষই সহজে নিজের আশ্রয়স্থল ত্যাগ করতে চায় না। তাই ১৯৩৫ সালে নতুন আইন চালু করলেন হিটলার। তাতে দেশের নাগরিকদের দুটি ভাগে ভাগ করা হলো, জেন্টিল আর জু। জেন্টিল অর্থাৎ জার্মান, তারাই খাঁটি আর্য, জু হলো ইহুদিরা। তারা শুধুমাত্র জার্মান দেশের বসবাসকারী, এদেশের নাগরিক নয়। প্রয়োজনে তাদের দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে। দেশজুড়ে জার্মানদের মধ্যে গড়ে তোলা হলো তীব্র ইহুদি বিদ্বেষী মনোভাব। জার্মানির ফুয়েরার হিটলার প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পর ইউরোপের মিত্রপক্ষ ও জার্মানদের মধ্যে যে ভার্সাই চুক্তি হয়েছিল তাতে প্রকৃতপক্ষে জার্মানির সমস্ত ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করে ফেলা হয়েছিল। ১৯৩৩ সালে হিটলার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জার্মানির গৌরব পুনরুদ্ধার করার সংকল্প গ্রহণ করেন এবং তিনি একে একে ভার্সাই চুক্তির শর্তগুলো মানতে অস্বীকার করে নিজের শক্তি ক্ষমতা বিস্তারে মনোযোগী হয়ে ওঠেন। ১৯৩৪ সালে হিটলার রাষ্ট্রপতির পরিবর্তে নিজেকে জার্মানির ফুয়েরার হিসেবে ঘোষণা করেন এবং অল্পদিনের মধ্যে নিজেকে দেশের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করলেন। তার এই সাফল্যের মূলে ছিল জনগণকে উদ্দীপিত করার ক্ষমতা। তিনি দেশের প্রান্তে প্রান্তে ঘুরে ঘুরে জনগণের কাছে বলতেন ভয়াবহ বেকারত্বের কথা, দারিদ্র্যের কথা, নানা অভাব-অভিযোগের কথা। জার্মানির সামরিক শক্তি বৃদ্ধি হিটলার তার সমস্ত ক্ষমতা নিয়োগ করলেন দেশের সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে। তার সহযোগী হলেন কয়েকজন সুদক্ষ সেনানায়ক এবং প্রচারবিদ। দেশের বিভিন্ন সীমান্ত প্রদেশে বিশাল সৈন্য সমাবেশ করলেন। কিছুদিনের মধ্যেই সন্ধির চুক্তি ভঙ্গ করে রাইনল্যান্ড অধিকার করলেন। অস্ট্রিয়া ও ইতালি ঐক্যসূত্রে আবদ্ধ হলো জার্মানির সাথে। ইতালির সর্বাধিনায়ক ছিলেন মুসোলিনি। একদিকে ইতালির ফ্যাসিবাদী শক্তি অন্যদিকে নাৎসি জার্মানি। বিশ্বজয়ের আকাঙ্ক্ষায় উন্মত্ত হয়ে ওঠে ইতালি। প্রথমে আলবেনিয়া ও পরে ইথিওপিয়ার বেশ কিছু অংশ দখল করে নেয়। এর পরপরি হিটলার পোল্যান্ডের কাছে ডানজিগ ও পোলিশ করিডর দাবি করলেন। যাতে এই অঞ্চলে সৈন্য সমাবেশ ঘটাতে পারেন। পোল্যান্ডের সরকার তার এই দাবি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করলেন। পোল্যান্ডের ধারণা ছিল হিটলার তার দেশ আক্রমণ করলে ইউরোপের অন্য সব শক্তি তার সাহায্যে এগিয়ে আসবে। তাদের সম্মিলিত শক্তির সামনে জার্মান বাহিনী খুব সহজেই পরাজিত হবে। কিন্তু এটাই ছিল ভুল ধারণা। কারণ সেই সময় তারা হিটলারের সামরিক শক্তি সম্পর্কে যে ধারণা করেছিল তা ছিল একে বারেই ভুল। হিটলারের সামরিক শক্তি সম্পর্কে ইউরোপের ভুল ধারণা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটি বড় কারণ জার্মানির সামরিক শক্তি সম্বন্ধে ইউরোপের অন্য সব দেশের সঠিক ধারণার অভাব। আর একটি বড় কারণ ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স প্রথম পর্যায়ে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য হিটলার ও মুসোলিনির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চায়নি। তাছাড়া ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ‘চেম্বারলিন’ এর ধারণা ছিল হিটলারের ক্ষমতা শুধুমাত্র প্রচারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তাছাড়া সেই সময় ইউরোপের বিভিন্ন রাষ্ট্রের কাছে জার্মানির চেয়ে বড় শত্রু ছিল কমিউনিস্ট রাশিয়া। তাদের উদ্দেশ্য ছিল রাশিয়ার প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে জার্মানরা নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে। তাই যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমস্ত শর্ত ভঙ্গ করে জার্মানরা নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করে চলেছিল তখন ইংল্যান্ড, ফ্রান্স কেউ তাদের বাধা দেয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। উপরন্তু হিটলারকে নানা সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়েছিল।

No comments: