বরেই ক্লাস সাবমেরিন(Borei class submarine)
_________________________________
রাশিয়ান নৌ-বাহিনীর সামুদ্রের যে অতন্দ্র প্রহরি গুলো রয়েছে, তার মধ্যে একটি হচ্ছে, দ্যা সাইলেন্ট কিলার হিসাবে
খ্যাত বরেই ক্লাস সাবমেরিন। এটি পৃথিবীর সর্বাধুনিক সাবমেরিন গুলোর মধ্যে একটি। রাশিয়ানরা এইসব সাবমেরিন গুলোকে প্রজেক্ট ৯৫৫ এর আওতায় তৈরী করেছে। এই সাবমেরিন
গুলোর কাঠামো টাইফুন,ডেলটা IV সাবমেরিনগুলোর মতোই। কিন্তু এটি তাদের চেয়ে উন্নত।এটি পৃথিবীর ৩য় বৃহত্তম ও শক্তিশালী সাবমেরিন । এর ভিতরে রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত সোনার,কম্পিউটারসিস্টেম, রাডার ও সেন্সর লাগানো আছে।এটি অত্যাধুনিক নিউক্লিয়ার পাওয়ার ব্যালেষ্টিক
মিসাইল সাবমেরিন। আশা করি নাম শুনেই ভয় পাচ্ছেন। এটির প্রধান
অস্ত্র RSM-56 বুলভা এসএলবিএম মিসাইল। এইধরণের সাবমেরিনের প্রথমটি তৈরী করা হয় ২০০৮ সালে এবং এর একমাত্র ব্যাবহারকারী দেশ হচ্ছে রাশিয়া।রাশিয়ানরা এই পর্যন্ত ৩টি বরেই
ক্লাস সাবমেরিন তৈরী করেছে। এবং ৩টিই বর্তমানে সার্ভিসে আছে। ২০২০ সালের মধ্যে রাশিয়ানরা আরো ৭টি অর্থাৎ মোট ১০ টি বরেই ক্লাস সাবমেরিন তাদের নৌ-বহরে যুক্ত করবে। বরেই ক্লাস সাবমেরিনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক
হচ্ছে স্টিলথ। এটি একটি সম্পূর্ণ স্টিলথ সাবমেরিন ।এর পুরো শরীর রাবার কোটেড আর ড্রাইভ শ্যাফট প্রোপালশন
রয়েছে, যার ফলে এটিকে ডিটেক্ট করা এক কথায় প্রায় অসম্ভব। এটিই প্রথম রাশিয়ান সাবমেরিন যেটিতে শ্যাফট
প্রোপালশন ব্যাবহার করা হয়েছে। এটি অত্যাধুনিক ৪র্থ জেনারেশনের সাবমেরিন।এরকম সাবমেরিন একসাথে
সাবমেরিন, জাহাজ, টর্পেডো, মাইন এমন কি উপরের লক্ষবস্তু পর্যন্ত সনাক্ত করতে পারে। এই সাবমেরিনগুলোর ওয়াটার
ডিসপ্লেসমেন্ট সাবমার্জড অবস্থায় প্রায় ২৪০০০ টন এবং সার্ফেসড অবস্থায় প্রায় ১৪৭২০ টন। এগুলোর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫৮
মিটার, বিম প্রায় ১৩.৫ মিটার এবং
ড্রাফট প্রায় ১০ মিটার। এটির শক্তির উৎস হিসাবে রয়েছে,
♦১টি ওকে-৬৫০বি নিউক্লিয়ার রিএ্যাক্টর।
♦১ টি এইইউ স্টিম টারবাইন।
♦১টি শ্যাফট এবং প্রপেলার (পাম্প -জেট)
যা একে সাবমার্জড অবস্থায় ৫৬কিলোমিটার আর সার্ফেসড
অবস্থায় ২৮ কিলোমিটার প্রতিঘন্টার স্পিডে চালাতে সক্ষম। এর
অপারেশনাল ডেপথ ৪৫০+মিটার পর্যন্ত কিন্তু আসলে আরও বেশি গভীরতায় যেতে সক্ষম। এই সাবমেরিনগুলো রেঞ্জ
আনলিমিটেট বা সীমাহীন।এটি পরিমিত খাদ্য ও রসদ নিয়ে একটানা ১+ বছর সামুদ্রে ডুবে থাকতে সক্ষম। এই সাবমেরিন গুলোতে অ্যান্টি সাবমেরিন অপারেশনের জন্য নিউক্লিয়ার আর্মড RPK-2 Viyuga ক্রুস মিসাইল ব্যাবহার করা হয়। এতে ছয়টি ৫৩৩ মি.মি. টর্পেডো টিউব রয়েছে যা থেকে প্রায় সব ধরণের ৫৩৩ মি.মি. টর্পেডো ছোড়া যায়। যেহেতু এটি ব্যালিষ্টিক মিসাইল সাবমেরিন, তাই এদের প্রধান অস্ত্র এসএলবিএম। এটি গুনে গুনে
♦১৬টি (বরেইII ২০টি) RSM-56 বুলভা এসএলবিএম বহন করে যা ট্রিপল-এম ICBM এর মডিফাইট এসএলবিএম ভার্সন এই মিসাইল গুলোর এক একটা ১৫০ কিলোটনের ১০টা এমআইআরভি নিয়ে ৮০০০ -১১০০০ কিঃমিঃ পথ পাড়ি দিয়ে নির্ভূল ভাবে আঘাত হানতে পারে।সুতরাং নিঃসন্দেহে বুঝাই যাচ্ছে,একটি বড় আকারের পারমাণবিক বোমার কার্যক্রম এটি দিয়ে করা যাবে।
এরকম একটি সাবমেরিনের ধব্বংস ক্ষমতা আকাশ চুম্বী। কোন
একটি দেশকে সমতল ভূমি বানাতে এরকম একটি সাবমেরিনই যথেষ্ট যদিও এর এক একটি সাবমেরিন তৈরীতে খরচ হয় ১ বিলিয়ন ডলারের মত।

No comments:
Post a Comment