আর মাত্র দু’দিন। আগামী শনিবারই ইতিহাস তৈরি করে ভারতের আকাশে যুদ্ধবিমান চালাবেন তিন মহিলা। গত কয়েকমাস ধরে চলছিল ট্রেনিং। আগামী ১৮ জুন, শনিবার ট্রেনিং শেষ করবেন তাঁরা।
ইতিহাস সৃষ্টিকারী এই তিন মহিলা সম্পর্কে কিছু তথ্য-
ভবানা কান্ত, বিহার:
বিহারের দ্বারভাঙার মেয়ে ভবানা। বেগুসরাইতে ইন্ডিয়ান কপোর্রেশনের টাউনশিপে বড় হয়েছেন তিনি। তাঁর বাবা I OCL-এর ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। বারাউনির ডিএভি স্কুলে পড়াশোনা করেছেন তিনি। এরপর বেঙ্গালুরুর বিএমএস ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে মেডিক্যাল ইলেকট্রনিক্স নিয়ে বিই পাশ করেন। খেলাধূলার মধ্যে ব্যাডমিন্টন তাঁর পছন্দের। এছাড়া রক ক্লাইম্বিং, র্যাফটিং, ট্রেকিং-এও তিনি সিদ্ধহস্ত। ফটোগ্রাফি, রান্নাবান্না আর সাঁতারের প্রতি ভালোবাসা কম নয় ভবানার। পাখীর মত ডানা মেলে ওড়ার স্বপ্নই তাঁকে আজ এই জায়গায় নিয়ে এসেছে। তিনি বলেন, ‘একজন দক্ষ ফাইটার জেট পাইলট হয়ে ওঠাই আমার লক্ষ্য। এভাবেই আমি বাবা-মা’কে গর্বিত করতে চাই।’
ভবানার কথায়, ট্রেনিং-এ গিয়ে তাঁর মনে হয়েছিল ‘স্পিনিং বোধহয় খুব সহজ একটা ব্যাপার। কিন্তু আদতে করতে গিয়ে তিনি দেখেন বিষয়টা মোটেই তা নয়। ট্রেনিং-এর পর ফাইটার জেট স্পিন করাতে গিয়ে প্রথমে তাঁর মনে হয়েছিল যদি আর সোজা করা সম্ভব না হয়। কিন্তু ২০,০০০ ফুট উচ্চতায় সেটা করতে সফল হন তিনি। আর আকাশ ছুঁয়ে যায় তাঁর আত্মবিশ্বাস।
অবনী চতুর্বেদী, মধ্যপ্রদেশ:
মধ্যপ্রদেশের সতনার বাসিন্দা তিনি। বাবা পেশায় ইঞ্জিনিয়ার, মা হোম মেকার। আদর্শ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে পড়াশোনা করেন অবনী। এরপর জয়পুরের বনস্থলী ইউনিভার্সিটি থেকে বি টেক পাশ করেন। ভায়োলিন বাজানো তাঁর শখ। টেবিল টেনিস আর আঁকায় পারদর্শী তিনি। কলেজের ফ্লাইং ক্লাবে কয়েক ঘণ্টা ওড়ার অভিজ্ঞতা ছিল তাঁর ঝুলিতে। সেখান থেকেই স্বপ্ন দেখার শুরু।
অবনী বলেন, দুটি এয়ারক্রাফট চালানোর সুবর্ন সুযোগ পেয়েছেন তিনি। দক্ষ পাইলট হিসেবে লাইভ অপারেশনে যাওয়াই তাঁর স্বপ্ন। ট্রেনিং-এর সময় তাঁর প্রথম টেক অফ করার অভিজ্ঞতা ভয়ঙ্কর। কোনও ক্রমে ইন্ডিকেশন পেয়ে এয়ারক্রাফট ওড়ানো বাতিল করেন তিনি।
ফাইট ক্যাডেট মোহানা সিং, রাজস্থান
বাবা রয়েছেন এয়ারফোর্স, মা স্কুল শিক্ষিকা। এয়ারফোর্স স্কুলেই পড়াশোনা করেন মোহানা। এরপর দিল্লি অমৃতসর থেকে বি টেক। গান, ছবি আঁকা, পড়াশোনা এসবই তাঁর শখ। এছাড়া আগ্রহ রয়েছে রান্নাবান্না, ফটোগ্রাফিতেও। বাবা আর ঠাকুরদাকে দেখেই এই পেশায় আসার উৎসাহ জন্মায়। বাবার মতই একই স্বপ্নে বাঁচতে চান তিনি। মোহানা বলেন, ‘পরিবারের ঐতিহ্য বহন করতে চেয়েছিলাম। এয়ারফোর্সের বেস্ট পাইলট হতে চাই।’ কমব্যাট মিশনের সদস্য হওয়াই তাঁর লক্ষ্য।
তাঁর কাছে রাতে বিমান ওড়ানোটাই ছিল ট্রেনিং-এ সবথেকে বেশি চ্যালেঞ্জিং। আকশে তারা আর মাটিতে থাকা আলোর বিন্দু সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছিল। সব ইনস্ট্রুমেন্টেরসঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর ইনস্ট্রাকটরের বার্তা শুনে সেইমত নামিয়ে আনেন যুদ্ধবিমান।
এবার সেসব ভয় পাওয়ার দিন শেষ। সামনে শুধুই চ্যালেঞ্জ। আরও বড় চ্যালেঞ্জ। আর বেশি উচ্চতায় ওড়ার স্বপ্ন। এই তিন মহিলার ইতিহাস তৈরির অপেক্ষায় দেশ।
সূত্র :কলকাতা 24*7

No comments:
Post a Comment