চিনকে ঠেকাতে ভারতকে পরমাণু উপহার দিতে চেয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি!
১৯৬৪ সালে মাও সে তুংয়ের চিন পরীক্ষামূলকভাবেপরমাণু বিস্ফোরণ ঘটায়৷ কিন্তু তার অনেক আগেই ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুকে যেচে নিউক্লিয়ার ডিটোনেটর উপহার দিতে চেয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি৷ নেহরু তাতে রাজি হননি৷ সেদিন যদি নেহরু কেনেডির প্রস্তাবে আগ্রহ দেখাতেন, তাহলে ভারতকে আজ আর পরমাণু সরবরাহ গোষ্ঠী বা এনএসজি-তে ঢুকতে গিয়ে চিনের থেকে পদে পদে এত বাধা পেতে হত না৷ এমনই অভিমত ভারতের প্রাক্তন বিদেশ সচিব মহারাজকৃষ্ণ রাসগোত্রর৷
ইন্দিরা গান্ধী এবং রাজীব গান্ধীর প্রধানমন্ত্রিত্বের কালে ভারতের বিদেশ সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন মহারাজকৃষ্ণ রাসগোত্র৷ সোমবার তাঁর লেখা বই ‘এ লাইফ ইন ডিপ্লোমেসি’ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেন ভারতের প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী যশবন্ত সিনহা৷ সেই বই প্রকাশের অনুষ্ঠানেই রাসগোত্র বলেন, সেদিন যদি নেহরু কেনেডির বাড়ানো হাত ধরতেন, তাহলে এশিয়ায় ভারতই প্রথম দেশ হিসাবে পরীক্ষামূলকভাবেপরমাণু বিস্ফোরণ ঘটাতে পারত৷ আর সেই ঘটনায় চিন তাজ্জব বনে যেত৷তার পর তারা যেমন ১৯৬২ সালে ভারত আক্রমণ করার সাহসও আর পেত না, ঠিক তেমনই ১৯৬৫ সালে ভারতের ঘাড়ে লাফিয়ে পড়ে যুদ্ধ বাধানো তো দূরস্থান, সে কথা ভাবার আগে পাক জেনারেল আয়ুব খানের বুকই শুকিয়ে যেত৷
সদ্য-প্রকাশিত বইতেও এই কথাগুলি লিখেছেন মহারাজকৃষ্ণ রাসগোত্র৷তাঁর বক্তব্য, ১৯৫০-এর দশকের শেষ ধাপেই মার্কিন গোয়েন্দাদের মারফত কেনেডি জানতে পেরেছিলেন যে, মাও সে তুংয়ের চিন পরমাণু পরীক্ষার তোড়জোড় করছে৷ এবং, এ ব্যাপারে তারা চূড়ান্ত সময়সীমা হিসাবে বেছেছে ১৯৬৪ সালকে৷ ভারতের প্রাক্তন বিদেশ সচিব তথা অভিজ্ঞ কূটনীতিক রাসগোত্র লিখছেন, ‘‘ভারতীয় গণতন্ত্রের প্রতি কেনেডির অত্যন্ত শ্রদ্ধা ছিল, নেহরুকেও তিনি অপরিসীম সমীহ করতেন, ভালোবাসতেন৷ সেই কারণেই তাঁর ইচ্ছা ছিল, কমিউনিস্ট চিনের আগে এশিয়ার বুকে ভারতই প্রথম পরমাণু পরীক্ষা ঘটাক৷’’ সে কারণেই তিনি নিজের হাতে জওহরলাল নেহরুকে একটি চিঠি লিখেছিলেন৷ তাতেই তদানীন্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট লেখেন, নেহরু নিজে যে পরমাণু পরীক্ষা কর্মসূচি এবং পরমাণু বোমার ঘোরতর বিরোধী তা তিনি বিলক্ষণ জানেন৷ কিন্তু কমিউনিস্ট চিন যদি এই পথেই এগয়, তাহলে রাজনৈতিক ও সামরিকভাবে নেহরুর সরকার তথা ভারতের নিরাপত্তা বিপন্ন হতে পারে৷ আর সে কারণেই তিনি চান, ভারতই প্রথম পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তাক লাগিয়ে দিক৷ আমেরিকার প্রশাসন সর্বতোভাবে সাহায্য করবে৷ সেই হাতে লেখা চিঠির সঙ্গেই জেএফকে তাঁর দেশের পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যানের একটি নোটও জুড়ে দেন৷ নেহরু চাইলে, মার্কিন পরমাণু বিশেষজ্ঞরা কীভাবে রাজস্থানের মরুভূমিতে আণবিক বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণে সহায়তা জোগাবেন, তার খুঁটিনাটি সেই নোটে দেওয়া ছিল৷ চিঠি শেষ করার আগে কেনেডি আবারও জোরের সঙ্গে নেহরুকে মনে করিয়ে দেন, ‘‘জাতীয় নিরাপত্তার চাইতে অন্য আর কোনও কিছুই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে না৷’’
রাসগোত্রই জানাচ্ছেন, প্রাথমিকভাবে নেহরু তাতে অরাজি ছিলেন না৷ কেনেডির প্রস্তাবে যাতে সাড়া দেওয়া যায়, তার জন্য তিনি ডঃ হোমি ভাবাকে ঝটিতি একটা পরিকল্পনাও ছকে ফেলতে বলেছিলেন৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভাবা এবং জিপি পার্থসারথির সঙ্গে আলোচনা করে তিনি কেনেডির প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন৷ ১৯৯০ সালে মহারাজকৃষ্ণ রাসগোত্র অবসর নেন৷

No comments:
Post a Comment