আন্তর্জাতিক রাজনীতি হোক বা মিডিয়া বর্তমানে ভারতের নিউক্লীয়ার সাপ্লাই গ্রুপের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আলোড়িত। নিঃসন্দেহে ভারত একটি পরমানু শক্তিধর দেশ কিন্তু নিউক্লীয়ার সাপ্লাই গ্রুপের সদস্য নয় তাই ভারত সরকারের এখন লক্ষ্য এই গ্রুপে প্রবেশ করা। বর্তমানে এই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা হলো ৪৮টি দেশ যার মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন সহ ৫টি দেশ রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য ও বাকী ৪৩টি দেশ নিউক্লীয়ার নন পলিফিরেশান থ্রিটি বা NPT এর চুক্তিতে সাক্ষর করা দেশ কিন্তু ভারত এই চুক্তির সাক্ষর কারী দেশ নয়। এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স,রাশিয়ার মত দেশ গুলো ভারতকে দায়ীত্বশীল পরমানশক্তি রুপে নিউক্লীয়ার সাপ্লাই গ্রুপে দেখতে ইচ্ছুক তেমনই চীন, তুরস্ক, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড এর মত দেশ NPT তে সাক্ষর না করার জন্য ভারতের অন্তর্ভুক্তি তে আপত্তি প্রকাশ করেছে। তীব্র কুটনৈতিক প্রয়াসের মাধ্যমে ভারত কানাডা, সুইজারল্যান্ড এর মত দেশ গুলোকে নিজেদের বশে এনেছে এবং বাকীদেরও চেষ্টা চালাচ্ছে। সোজা কথায় বিশ্বের পরমানু বানিজ্যের রাশ যে ৪৮টি দেশের হাতে রয়েছে সেই গ্রুপে প্রবেশ করতে ভারত মরিয়া। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো নিউক্লীয়ার সাপ্লাই গ্রুপে প্রবেশের জন্য ভারত এত মরিয়া কেন?? এই গ্রুপে প্রবেশ করতে পারলে ভারতের কি কি সুবিধা লাভ হবে??
.
★আসুন আজ আলোচনা করে দেখি এই গ্রুপে প্রবেশ করার ফলে ভারত কি কি বিশেষ সুবিধা পাবে :
.
১. নিউক্লীয়ার সাপ্লাই গ্রুপে অন্তর্ভুক্তি মানে ভারতের সামনে পরমানু প্রযুক্তির এক নতুন যুগের সুচনা হবে। বর্তমানে ভারতের পরমানু প্রকল্প গুলি ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তির দ্বারাই পরিচালিত কিন্তু নিউক্লীয়ার সাপ্লাই গ্রুপের সদস্য হলে ভারত এই গ্রুপের বাকী সদস্য দেশ গুলির থেকে বিনা বাধায় আরো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সংগ্রহ করতে পারবে যাতে ভারতের পরমানু প্রকল্প গুলি আরো সমৃদ্ধ ও উন্নত হবে। উল্লেখ্য, কেবলমাত্র অসামরিক উদ্দেশ্যেই এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাবে।
. ২. ভারতের মত বিশাল একটি দেশের দ্রুত উন্নতির জন্য চাই শক্তি বা বিদ্যুৎ। বর্তমানে ভারতের মত সব উন্নয়নশীল দেশ গুলোই পর্যাপ্ত শক্তির অভাব অনুভুত করছে। ভারতের শক্তির প্রধান উৎস প্রধানত তাপবিদ্যুৎ। কিন্তু এইভাবে দশকের পর দশক চলা আর সম্ভব নয় তাই তাপবিদ্যুতের বিকল্প হিসাবে সবথেকে গ্রহন যোগ্য মাধ্যম হলো সুরক্ষিত পরমানু বিদ্যুৎ কিন্তু পরমানু জ্বালানীর আদান প্রদান নিয়ন্ত্রণ করে নিউক্লীয়ার সাপ্লাই গ্রুপ। ভারত এই গ্রুপের সদস্য না হওয়ায় কোন দেশ থেকে পরমানু জ্বালানী আমদানি করতে বিস্তর বাধা অতিক্রম করতে হয় যা সময়সাপেক্ষও বটে।
.
৩. নিউক্লীয়ার সাপ্লাই গ্রুপে ভারতের প্রবেশে ভারত যেন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি হস্তগত করতে পারবে তেমনই পরমানু বানিজ্যের দ্বার ভারতের সামনে খুলে যাবে। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভারত আরো উন্নত নিউক্লীয়ার রিয়েক্টার উৎপাদন করতে পারবে। ফলে ভারতের প্রতিবেশী দেশ গুলো যেমন, শ্রীলংকা, বাংলাদেশ ইত্যাদি দেশ গুলিকে তাদের দ্রুত আর্থিক বিকাশের লক্ষ্যে অসামরিক পরমানু বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তি ও নিউক্লীয়ার রিয়েক্টার দিয়ে সাহায্য করতে পারবে।
.
৪. নিউক্লীয়ার সাপ্লাই গ্রুপে প্রবেশ করতে পারলে ভারত তাদের বিভিন্ন প্রযুক্তিসহ নিউক্লীয়ার রিয়েক্টার পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করতে পারবে। এরফলে আন্তর্জাতিক মহলে পরমানু শক্তিধর দেশ হিসাবে ভারতের ছবিই শুধু উজ্জ্বল হবে না সাথে ভারতে পরমানু বানিজ্য শিল্পের এক অধ্যায় শুরু হবে। ভারত সরকারের মেক ইন ইন্ডিয়া নীতি গতিলাভ করবে।
.
৫. নিউক্লীয়ার সাপ্লাই গ্রুপ সর্বসম্মতিক্রমেকাজ করে থাকে অর্থাৎ ভারতের এই গ্রুপে প্রবেশের অর্থ সারা জীবনের জন্য পাকিস্থান বা অন্য ভারত বিরোধী রাস্ত্রের এই গ্রুপে প্রবেশের দরজা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাওয়া। এটাই পাকিস্থানের সবথেকে বেশী ভয়ে ও চীনের প্রধান আপত্তির কারন তাই চীনের উদ্দেশ্য ভারতের সদস্যপদ শেষে আটকানো সম্ভব না হয়ে পাকিস্থান কেও ভারতের সাথেই এই গ্রুপের সদস্য করে দেওয়া।
.
★এবার প্রশ্ন হলো ভারতের এনএসজি গ্রুপে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে চীনের পরোক্ষ আপত্তির কারন কি..???
.
চীন বারবার ভারত কে আটকানোর জন্য NPT এর প্রশ্ন তুলছে কিন্তু নিউক্লীয়ার সাপ্লাই গ্রুপে প্রবেশ করার জন্য NPT তে সাক্ষর করা আবশ্যক এই ধরনের কথা কোথাও বলা নেই শুধু বলা হয়েছে NPT তে সাক্ষর করা থাকলে ভাল। NPT বা পরমানু নিরস্ত্রিকরন চুক্তিতে ভারতের সই করা মানে ভারতের সব ধরনের সামরিক পরমানু প্রকল্প গুলি বন্ধ করার সামিল হবে যা প্রত্যেক সপ্তাহে পাকিস্থানের থেকে পরমানু আক্রমনের হুমকি তে থাকা ভারতের জন্য অসম্ভব। কিন্তু সবথেকে বড় কথা এনএসজি গ্রুপের সদস্য হওয়ার জন্য NPT তে সাক্ষর করা বাধ্যতামূলক নয়। দ্বিতীয়ত, এই মাসের ৭ তারিখে ৩৪টি দেশের সর্বসম্মতি ক্রমে ভারত মিসাইল কন্টোল টেকনোলজি রিজিমের সদস্যপদ লাভ করেছে যা ২০০৪সাল থেকে চেষ্টা করার পরেও চীন এখনো লাভ করতে পারি নি কারন তাদের ওপর গোপনে পাকিস্থান,ইরান ও উত্তর কোরিয়াকে মিসাইল টেকনোলজি দেওয়ার অভিযোগ আছে। তাই চীনের পক্ষে হয়ত এই অপমান হজম করা সহজ হচ্ছে না। তৃতীয়ত, চিন মনে করছে ভারত এনএসজি গ্রুপের সদস্যপদ লাভ করলেই রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী আসন লাভ করার জন্য সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপাবে যা, চীনের রাস্ট্রহিতের পরিপন্থী বলে চীন মনে করে। চতুর্থ, চিন দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার শক্তি ভারসাম্য রক্ষার নামে শুধু এনএসজি তেই নয় প্রায় সব জায়গায় পাকিস্থান কে ভারতের বিপরীতে এগিয়ে দিচ্ছে। যদিও সারা বিশ্বই জানে পাকিস্থানের মত একটি জঙ্গিবিধস্ত, ভঙ্গুর ও ব্যর্থ অর্থনীতির দেশের পক্ষে ভারতের মত এশিয়ার উদিতমান শক্তির সাথে টক্কর দেওয়া আর সম্ভব নয় তাই অর্থনীতি, সামরিক বা আন্তর্জাতিক প্রভাবে ভারত ও পাকিস্থানের মধ্যে দক্ষিন এশিয়ায় শক্তি ভারসাম্য রাখা এখন অসম্ভব কারন পাকিস্থানের পক্ষে ভারতের মত শক্তিশালী রাষ্ট্র কে আটকানো দূরে থাক আফগানিস্থানের মত দুর্বল রাস্ট্র কেও আটকানো কষ্টসাধ্য হচ্ছে। আশা করা যায়, চীনের বুদ্ধিমান শাসক রা খুব তাড়াতাড়ি এই সত্য উপলব্ধি করতে পারবে। তাই বলা যায় চীন কুটনৈতিক প্রয়াসের মাধ্যমে ভারতের নিউক্লীয়ার সাপ্লাই গ্রুপে প্রবেশ কিছু সময়ের জন্য দেরী করিয়ে দিতে পারে কিন্তু শেষ পর্যন্ত আটকাটে পারবে না। তাই ভারতের বিদেশমন্ত্রী শ্রীমতি সুষমা স্বরাজ বলেছেন, "আমি আত্মবিশ্বাসী এই বছরের মধ্যেই ভারত এনএসজি গ্রুপের সদস্য পদ লাভ করতে সমর্থ হবে।"
.
৩. নিউক্লীয়ার সাপ্লাই গ্রুপে ভারতের প্রবেশে ভারত যেন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি হস্তগত করতে পারবে তেমনই পরমানু বানিজ্যের দ্বার ভারতের সামনে খুলে যাবে। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভারত আরো উন্নত নিউক্লীয়ার রিয়েক্টার উৎপাদন করতে পারবে। ফলে ভারতের প্রতিবেশী দেশ গুলো যেমন, শ্রীলংকা, বাংলাদেশ ইত্যাদি দেশ গুলিকে তাদের দ্রুত আর্থিক বিকাশের লক্ষ্যে অসামরিক পরমানু বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তি ও নিউক্লীয়ার রিয়েক্টার দিয়ে সাহায্য করতে পারবে।
.
৪. নিউক্লীয়ার সাপ্লাই গ্রুপে প্রবেশ করতে পারলে ভারত তাদের বিভিন্ন প্রযুক্তিসহ নিউক্লীয়ার রিয়েক্টার পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করতে পারবে। এরফলে আন্তর্জাতিক মহলে পরমানু শক্তিধর দেশ হিসাবে ভারতের ছবিই শুধু উজ্জ্বল হবে না সাথে ভারতে পরমানু বানিজ্য শিল্পের এক অধ্যায় শুরু হবে। ভারত সরকারের মেক ইন ইন্ডিয়া নীতি গতিলাভ করবে।
.
৫. নিউক্লীয়ার সাপ্লাই গ্রুপ সর্বসম্মতিক্রমেকাজ করে থাকে অর্থাৎ ভারতের এই গ্রুপে প্রবেশের অর্থ সারা জীবনের জন্য পাকিস্থান বা অন্য ভারত বিরোধী রাস্ত্রের এই গ্রুপে প্রবেশের দরজা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাওয়া। এটাই পাকিস্থানের সবথেকে বেশী ভয়ে ও চীনের প্রধান আপত্তির কারন তাই চীনের উদ্দেশ্য ভারতের সদস্যপদ শেষে আটকানো সম্ভব না হয়ে পাকিস্থান কেও ভারতের সাথেই এই গ্রুপের সদস্য করে দেওয়া।
.
★এবার প্রশ্ন হলো ভারতের এনএসজি গ্রুপে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে চীনের পরোক্ষ আপত্তির কারন কি..???
.
চীন বারবার ভারত কে আটকানোর জন্য NPT এর প্রশ্ন তুলছে কিন্তু নিউক্লীয়ার সাপ্লাই গ্রুপে প্রবেশ করার জন্য NPT তে সাক্ষর করা আবশ্যক এই ধরনের কথা কোথাও বলা নেই শুধু বলা হয়েছে NPT তে সাক্ষর করা থাকলে ভাল। NPT বা পরমানু নিরস্ত্রিকরন চুক্তিতে ভারতের সই করা মানে ভারতের সব ধরনের সামরিক পরমানু প্রকল্প গুলি বন্ধ করার সামিল হবে যা প্রত্যেক সপ্তাহে পাকিস্থানের থেকে পরমানু আক্রমনের হুমকি তে থাকা ভারতের জন্য অসম্ভব। কিন্তু সবথেকে বড় কথা এনএসজি গ্রুপের সদস্য হওয়ার জন্য NPT তে সাক্ষর করা বাধ্যতামূলক নয়। দ্বিতীয়ত, এই মাসের ৭ তারিখে ৩৪টি দেশের সর্বসম্মতি ক্রমে ভারত মিসাইল কন্টোল টেকনোলজি রিজিমের সদস্যপদ লাভ করেছে যা ২০০৪সাল থেকে চেষ্টা করার পরেও চীন এখনো লাভ করতে পারি নি কারন তাদের ওপর গোপনে পাকিস্থান,ইরান ও উত্তর কোরিয়াকে মিসাইল টেকনোলজি দেওয়ার অভিযোগ আছে। তাই চীনের পক্ষে হয়ত এই অপমান হজম করা সহজ হচ্ছে না। তৃতীয়ত, চিন মনে করছে ভারত এনএসজি গ্রুপের সদস্যপদ লাভ করলেই রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী আসন লাভ করার জন্য সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপাবে যা, চীনের রাস্ট্রহিতের পরিপন্থী বলে চীন মনে করে। চতুর্থ, চিন দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার শক্তি ভারসাম্য রক্ষার নামে শুধু এনএসজি তেই নয় প্রায় সব জায়গায় পাকিস্থান কে ভারতের বিপরীতে এগিয়ে দিচ্ছে। যদিও সারা বিশ্বই জানে পাকিস্থানের মত একটি জঙ্গিবিধস্ত, ভঙ্গুর ও ব্যর্থ অর্থনীতির দেশের পক্ষে ভারতের মত এশিয়ার উদিতমান শক্তির সাথে টক্কর দেওয়া আর সম্ভব নয় তাই অর্থনীতি, সামরিক বা আন্তর্জাতিক প্রভাবে ভারত ও পাকিস্থানের মধ্যে দক্ষিন এশিয়ায় শক্তি ভারসাম্য রাখা এখন অসম্ভব কারন পাকিস্থানের পক্ষে ভারতের মত শক্তিশালী রাষ্ট্র কে আটকানো দূরে থাক আফগানিস্থানের মত দুর্বল রাস্ট্র কেও আটকানো কষ্টসাধ্য হচ্ছে। আশা করা যায়, চীনের বুদ্ধিমান শাসক রা খুব তাড়াতাড়ি এই সত্য উপলব্ধি করতে পারবে। তাই বলা যায় চীন কুটনৈতিক প্রয়াসের মাধ্যমে ভারতের নিউক্লীয়ার সাপ্লাই গ্রুপে প্রবেশ কিছু সময়ের জন্য দেরী করিয়ে দিতে পারে কিন্তু শেষ পর্যন্ত আটকাটে পারবে না। তাই ভারতের বিদেশমন্ত্রী শ্রীমতি সুষমা স্বরাজ বলেছেন, "আমি আত্মবিশ্বাসী এই বছরের মধ্যেই ভারত এনএসজি গ্রুপের সদস্য পদ লাভ করতে সমর্থ হবে।"

1 comment:
Post a Comment