Monday, 6 June 2016

পাকিস্তানের পরমাণু বিজ্ঞানী কাদের খান

সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের পরমাণু বিজ্ঞানী কাদের খান বলেন, পাকিস্তান যে কোন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ৫ মিনিটের মধ্যে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে ভারতের রাজধানী দিল্লিসহ বড় বড় শহরগুলো ধ্বংস করতে সক্ষম। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও সোস্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচনা ও বিতর্কের সৃষ্টি করে। মুলত এ ধরনের পারমাণবিক অস্ত্র প্রয়োগের হুমকি স্রেফ কৌশলগত ভাবে সামরিক সুবিধা আদায় ও ভারতকে এক রকম চাপে রাখতে এ ধরনের বক্তব্য পাকিস্তান মাঝে মধ্যেই প্রকাশ করে থাকে। মুলত মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পাকিস্তান প্রচলিত সামরিক আধুনিকায়ন ও সক্ষমতার বিচারে ভারত অপেক্ষা অতি দ্রুতই ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে এবং যে কোন নিকট ভবিষ্যতে ভারতের সামরিক আগ্রাসন প্রতিহত করতে কৌশলগত ভাবে নির্বিচারে পারমাণবিক ওয়ারহেড মজুতকরন ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়ন অব্যাহত রাখা ছাড়া পাকিস্তানের কাছে এ মুহূর্তে বিকল্প কোন বিকল্প পথ খোলা বলে মনে হয় না। এছাড়া পাকিস্তানের বর্তমান অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও সংকটের মুখে বিপুল পরিমাণ পারমাণবিক অস্ত্রের মজুত গড়ে তোলা বাস্তবিক অর্থেই খুব কঠিন বা এক কথায় অসম্ভব। তবে এক্ষেত্রে পাকিস্তানকে পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়নে খুব সম্ভবত সৌদি আরব বিলিয়ন ডলারের ফান্ড সহায়তা করে যাচ্ছে। এখানে প্রকাশ থাকে যে, বাস্তবে যে কোন রাষ্ট্র বা শত্রু পক্ষের উপর সরাসরি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করা খুবই জটিল এবং ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে অপর পক্ষ যখন ঠিক একই ভাবে পারমাণবিক অস্ত্র সজ্জিত থাকে সেক্ষেত্রে পাল্টা ভয়ঙ্কর পারমাণবিক হামলা হজম করা খুব কঠিন বিষয় হতে পারে যা এক রকম নিশ্চিত। এছাড়া ভারত সূদুর পরিকল্পনা মাফিক পারমাণবিক সাবমেরিন ভিত্তিক ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সজ্জিত 'সেকেন্ড ইন নিউক্লিয়ার এট্যাক ক্যাপাবিলিটি' প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বলয় গড়ে তুলতে বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে যাচ্ছে। যার আওতায় ভারত ইতোমধ্যেই নিজস্ব ভাবে নতুন প্রজন্মের পারমাণবিক সাবমেরিন তৈরিসহ সাবমেরিন ভিত্তিক অগ্নি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়নে ৯.৮০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করে রেখেছে। তাই এক্ষেত্রে পারমাণবিক অস্ত্র প্রয়োগের হুমকির মতো স্পর্শকাতর বিষয়টি পাকিস্তানের জন্য কতটা বিপজ্জনক হতে পারে তা সহজে অনুমান করা সত্যিকার অর্থেই অসম্ভব। সাম্প্রতিক একটি সামরিক গবেষণার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে পাকিস্তানের কাছে আনুমানিক ১১০-১৩০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড থাকতে পারে। যেখানে ভারতের কাছে আনুমানিক ৯০-১১০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আমাদের জানা উচিত এ ধরনের গবেষণার প্রতিবেদন সামগ্রিক ভাবে অনুমান নির্ভর এবং বাস্তবে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো কৌশলগত কারণে এ পর্যন্ত কখনোই তাদের পরমাণু অস্ত্র সক্ষমতা নিয়ে সঠিক তথ্য উপাত্ত প্রকাশ করে নি বা তাদের পক্ষে এটা করা সম্ভব না। তাই এক্ষেত্রে গবেষণায় পাকিস্তান ও ভারতের পারমাণবিক অস্ত্র সংক্রান্ত যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হোক না কেন এটা নিশ্চিত যে, পাকিস্তানের পারমাণবিক ওয়ারহেডগুলো অপেক্ষাকৃত ছোট আকৃতির এবং খুব সম্ভবত অধিকাংশই কিলোটন ধ্বংস ক্ষমতা সম্পন্ন। যেখানে ভারতের পারমাণবিক অস্ত্র সক্ষমতা সংখ্যাগত বিচারে কম মনে হলেও তারা ইতোমধ্যেই কমপক্ষে ২৭-৩০টি অত্যন্ত ধ্বংসাত্বক মেগাটন ক্ষমতা সম্পন্ন পারমাণবিক অস্ত্রের উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরো শতাধিক নতুন প্রজন্মের মেগাটন ধ্বংস ক্ষমতা সম্পন্ন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পর্যাপ্ত ইউরেনিয়াম মজুত রয়েছে। এছাড়া পাকিস্তান পারমাণবিক ওয়ারহেড সমৃদ্ধ শতাধিক ১৫০০ কিলোমিটার পাল্লার শাহিন-২ এবং সর্বোচ্চ ২৭৫০ কিলোমিটার পাল্লার ট্যাকটিক্যাল শাহীন- ৩ মিডিয়াম রেঞ্জ ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের বিরুদ্ধে সার্বক্ষণিক মোতায়েন করে রেখেছে এবং এতে করে ভারতের অনেক বড় বড় শহর ও গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনা পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায় চলে আসলেও ভারতের রয়েছে নিজস্ব শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। যার ফলে ভারত পাকিস্তানের ৮০% ক্ষেপণাস্ত্র হামলা আকাশেই প্রতিহত করতে সক্ষম হবে এবং বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে ভারত রাশিয়া থেকে ৬.২০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ৫ রেজিমেন্ট অত্যাধুনিক এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্রয়ের চুক্তি সম্পন্ন করে। এতে করে ভারত তার নিজস্ব আকাশ অনেকাংশেই নিরাপদ রাখতে সক্ষম হবে বলে আশা করা যায়। আবার ভারতের নিজস্ব উৎপাদিত শক্তিশালী এএডি এবং পিএডি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকায় পাকিস্তানের পক্ষে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সুযোগ ও সম্ভবনা দুটোই বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে থেকে যাচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়। এদিকে পাকিস্তানের নিজস্ব আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে তেমন তথ্য না পাওয়া গেলেও পাকিস্তান চীন থেকে ৩ রেজিমেন্ট এইচকিউ-৯ সারফেস টু এয়ার মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম সংগ্রহ করার বিষয়ে দ্বারুন আশাবাদী।

No comments: