Saturday, 4 June 2016

পূর্বাঞ্চলবর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স

                                               *****পূর্বাঞ্চল বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স *****
বিএসএফ সদর দপ্তর ভারতের নয়া দিল্লিতে অবস্থিত। বিএসএফ’র প্রধানকে বলা হয় ডাইরেক্টর জেনারেল (ডিজি); যিনি রাজ্য পুলিশ ফোর্সের ডিজি এবং সেনাবাহিনীর লেফট্যানেন্ট জেনারেল পদমর্যাদার অফিসার। বিএসএফকে অপারেশনের সুবিধার্থে ২টি থিয়েটারে বিভক্ত করা হয়েছে। একটি হল পূর্বাঞ্চল থিয়েটার, যার সদর দপ্তর কলকাতায় আর অন্যটি হলো পশ্চিমাঞ্চল থিয়েটার, যার সদর দপ্তর চন্ডিগড়ে। প্রতিটি থিয়েটারের কমান্ডে রয়েছেন একজন স্পেশাল ডিজি। তিনিও সেনাবাহিনীর লেফট্যানেন্ট জেনারেল পদমর্যাদার অফিসার। প্রতিটি থিয়েটারকে আবার কয়েকটি ফ্রন্টিয়ার সদর দপ্তরে ভাগ করা হয়েছে, যার কমান্ডে আছেন একজন আইজিপি, যিনি সেনাবাহিনীর একজন মেজর জেনারেল পদমর্যাদার অফিসার। পশ্চিমাঞ্চল থিয়েটারে ৫টি ও পূর্বাঞ্চল থিয়েটারে ৭টি ফ্রন্টিয়ার সদর দপ্তর মিলে সর্বমোট ১২টি ফ্রন্টিয়ার সদর দপ্তর রয়েছে বিএসএফ’র । প্রতিটি ফ্রন্টিয়ার সদর দপ্তরকে আবার কয়েকটি সেক্টর সদর দপ্তরে ভাগ করা হয়েছে, যার কমান্ডে আছেন একজন ডিআইজিপি, যিনি সেনাবাহিনীর একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদমর্যাদার অফিসার। বিএসএফ’র সর্বমোট ৩১টি এমন সেক্টর সদর দপ্তর আছে। প্রতিটি সেক্টর সদর দপ্তরের অধীনে ৪ থেকে ৫টি বিএসএফ ব্যাটালিয়ন রয়েছে, যার কমান্ডে রয়েছেন একজন কর্নেল পদমর্যাদার অফিসার। এছাড়া প্রতিটি ব্যাটালিয়নে রয়েছে একজন লে. কর্নেল পদমর্যাদার অফিসার (এসপি/ডিসিপি)। সুতরাং প্রতিটি কোম্পানি পর্যায়ে একজন অফিসার রয়েছেন, যেটা বিজিবিতে নেই। বিএসএফ একটি কেন্দ্রীয় আর্মড পুলিশ ফোর্স। সর্বমোট ব্যাটালিয়নের সংখ্যা ১৮৬টি এবং সর্বমোট সৈন্য সংখ্যা ২৪০,০০০ (দুই লক্ষ চল্লিশ হাজার) এর মতো; যা পৃথিবীর বৃহত্তম সীমান্তরক্ষীদেরএকটি। বিএসএফই একমাত্র কেন্দ্রীয় আর্মড পুলিশ ফোর্স; যার নিজস্ব এয়ার উইং, ম্যারিন উইং ও গোলন্দাজ রেজিমেন্ট রয়েছে। যেগুলো তাদের সীমান্তে মোতায়েন ব্যাটালিয়নগুলোকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করে। বিএসএফ’র নিজস্ব কুকুর স্কোয়াড রয়েছে, যেগুলো তাদেরকে টহল, বিস্কোরক চিহ্নিতকরণ ও রাস্তা চিনতে সাহায্য করে। বিএসএফ’র রয়েছে টিয়ার গ্যাস ইউনিট, যা কাঁদানে গ্যাস প্র¯ুÍত করে। তাছাড়া বিএসএফ’র অস্ত্র ভা-ারে রয়েছে ৫.৫৬ মি.মি. মেশিনগান, রকেট প্রপেল্ড গ্রেনেড, রিকয়লেস রাইফেল ও ৩ ইঞ্চি মর্টার। বিএসএফ’র নিজস্ব বিমান বিধ্বংসী এয়ার ডিফেন্স মিসাইল রয়েছে। তন্মধ্যে এসএ-১৬ গিমলেট ও এসএ-৭ গ্রেইল অন্যতম। বিএসএফ’র রয়েছে এলিট কমান্ডো ফোর্স, যার নাম ‘ক্র্যাক ক্রোকোডাইল’। এর সদস্য সংখ্যায় রয়েছে প্রায় ৪২ জন কমান্ডো। তাছাড়া হালে বিএসএফকে মাইন চিহ্নিতকরণ গাড়িও প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে বিএসএফ-এ একটি নারী ব্যাটালিয়নও যুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশের বিপরীতে বিএসএফ’র প্রায় ৫টি ফ্রন্টিয়ার সদর দপ্তর রয়েছে। এগুলো হলো : ১. সাউথ বেঙ্গল ২. মালদা ৩. নর্থ বেঙ্গল ৪. মেঘালয় ও ৫. ত্রিপুরা ফ্রন্টিয়ার। এই ৫টি ফ্রন্টিয়ারের অধীনে প্রায় ১৫টি সেক্টর সদর দপ্তর রয়েছে। প্রতিটি সেক্টর সদর দপ্তরের অধীনে ৪ থেকে ৫টি ব্যাটালিয়ন হিসাবে বাংলাদেশের সীমান্তে বিএসএফ’র প্রায় ৬০ থেকে ৭৫টি ব্যাটালিয়ন মোতায়েন রয়েছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৪০৯৬.৭ কিলোমিটার ল্যান্ড বর্ডার রয়েছে। যে সমস্ত রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত রয়েছে সেগুলো হলো : পশ্চিম বাংলা (২২১৬.৭০ কি.মি.), আসাম (২৬৩ কি.মি), মেঘালয় (৪৪৩ কি.মি), ত্রিপুরা (৮৫৬ কি.মি) ও মিজোরাম (৩১৮ কি.মি)। প্রতিটি বিএসএফ ব্যাটালিয়নের অধীনে অনেকগুলো বর্ডার আউট পোস্ট বা বিওপি রয়েছে। বর্তমানে বিএসএফ’র সমগ্র বাংলাদেশ সীমান্তব্যাপী ৮০২টি বিওপি আছে। সে হিসাবে বিওপি থেকে বিওপি দূরত্ব¡ হলো ৫ কিলোমিটার। বিএসএফ চাচ্ছে তাদের বিওপি থেকে বিওপি দূরত্ব ৩.৫ কিলোমিটারে নামিয়ে আনতে। সে জন্য ভারত সরকার পশ্চিম বাংলায় ৪১০টি থেকে ৭০৩টি বিওপি, মেঘালয়ে বর্তমানে ১০৮টি বিওপি থেকে ১২৫টি, আসামে ৮৫টি বিওপি থেকে ৯১টি, ত্রিপুরা সীমান্তে ১৮১টি বিওপি থেকে ২৪৫টি এবং মিজোরামে ১৮টি বিওপি থেকে বাড়িয়ে ৯১টি বিওপি বানানোর প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ২০১৪ সালের মধ্যে এসব বিওপি অপারেশনাল করা হবে। ভারত সরকার বাংলাদেশ-ভারত পুরো সীমান্ত এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তন্মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া হবে ৩৪৩৬ কিলোমিটার, আর রাস্তা হবে ৪৪২৬ কিলোমিটার। এরই মধ্যে ২৭৬০ কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়া এবং ৩৬০৫ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ শেষ হয়েছে। ভারত সরকার সীমান্তজুড়ে ফ্লাডলাইটিং-এর ব্যবস্থা করেছে। ইতোমধ্যে পশ্চিম বাংলায় ২৭০ কিলোমিটার এলাকায় ফ্লাডলাইটিং-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সব মিলে ২৮৪০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ফ্লাডলাইটিং করা হবে। তন্মধ্যে ৭৭৫ কিলোমিটার শেষ হয়েছে এবং ৭৫০ কিলোমিটারের কাজ চলছে I

No comments: