দ্বিতীয় চীন-ভারত যুদ্ধ : ১৯৬৭ (Nathu La and Cho La Incidents)
.
#পটভূমি:
.
সিকিম তখনও ভারতের অংশ হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেনি তবে তখন থেকেই ভারতের সেনাবাহিনী সিকিমকে সামরিক প্রতিরক্ষা প্রদান করতো কারন ১৯৫০ সালে চীন তিব্বত দখল করার পর থেকেই সিকিমকে নিজের অংশ বলে দাবী করতে থাকে। ম্যাকমোহন লাইন অনুসারে ভারত চীনের দাবী উপেক্ষা করে। ১৯৬২ সালে প্রথম চীন-ভারত যুদ্ধর মাএ ৫ বৎসরের মধ্যেই সিকিম নিয়ে দুই শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে আবার খন্ডযুদ্ধ বেধে যায়, যাকে chola incident ও বলা হয়।
#ঘটনাবলী:
.
১৯৬৫ সালের থেকেই চীন সিকিমের নাথুলা সীমাবর্তি অঞ্চলে কিছু লাইডস্পিকারের মাধ্যমে প্রত্যহ ভারতের সেনাবাহিনীদের সিকিম থেকে চলে যাওয়ার হুমকি দিতে থাকে ও বলতে থাকে "তোমারা সিকিম ত্যাগ করো, না হলে আবার তোমাদের ১৯৬২সালে মত পরিস্থিতির মুখে পরতে হবে "। ১৯৬৭ সালের আগস্ট মাসে হঠাৎ তাদের যুদ্ধ প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় ও তারা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে নতুন নতুন সেনাছাউনি বানানো ও ভারী অস্ত্রসস্ত্র আমদানি করতে থাকে। ফলসরুপ, ভারতীয় সেনাদল নাথুলা থেকে সি মুলা পর্যন্ত কাটা তারের বেড়া দিতে শুরু করে কিন্তু চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি এসে এর বিরোধীতা করে ফলে তীব্র বাকবিতণ্ডার পর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ৭সেপ্টেম্বর সকালে ভারতীয় সেনারা কাজ শুরু করলেই আবার চীনের প্রায় ১০০জন সেনা এসে তর্কবিতর্ক শুরু করে দেয় এবং শেষে তা হাতাহাতিতে গিয়ে পৌছায় কিন্তু শিখ সেনাদের সাথে গায়ের জোরে পেরে উঠবেনা বূঝতে পেরে চীনা সেনারা আবার সীমানার ওপারে পালিয়ে যায়।
১১সেপ্টেম্বর আবার ভারতীয় সেনা কাজ শুরু করার সাথে সাথেই চীনা সেনাবাহিনী ভারী অস্ত্র দিয়ে গুলী চালাতে শুরু করে। হঠাৎ আক্রমনে ভারতের সেনাবাহিনী ভারী ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ে। ফলে তারাও ভারী অস্ত্র দিয়ে চীনা আক্রমনের জবাব দিতে শুরু করে। টানা তিনদিন দুইপক্ষের মধ্যে যুদ্ধ চলতে থাকে যাতে চীনের ৩০০ জন সেনা নিহত ও ৪৫০ জন আহত হয় ও বাঙ্কার গুলো সম্পুর্ন ধ্বংস হয়ে যায়। ভারতের পক্ষেও ৮৩ জন নিহত ও ১৬২ জন আহত হয়।
.
নাথুলা সীমান্তে ভারী ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি চোলা সেক্টরে অপর একটি ফ্রন্ট খুলে যুদ্ধক্ষেত্রকে আরো বাড়াবার পরিকল্পনা গ্রহন করে। ১ অক্টোবর সিকিমের chola সেক্টার আক্রমণ করে। চোলা সেক্টরও খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল তাই সেখানে ভারতীয় সেনারা আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। তাই চীনা আক্রমণ ব্যর্থ হয় ও ৪০ জন চীনা সেনার মৃত্যু হয় ও ৫ জন ভারতীয় সেনার মৃত্যু হয়। এই ক্ষয়-ক্ষতির ফলে চীনা সেনাবাহিনী বর্ডার থেকে তিন কিলোমিটার দূরে তাদের কিম সেনাঘাটিতে পালিয়ে যায় ও সেখান থেকেই গুলীর লড়াই চালাতে থাকে তবে সুবিধা জনক অবস্থায় থাকায় ভারতীয় সেনাবিভাগের বিশেষ ক্ষয়ক্ষতি হয় না। যাই হোক, ১০ অক্টোবর এই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি হয় ও পরবর্তি সময়ে ভারতের সেনাবাহিনী কাটাতারের বেড়া দেবার কাজও শেষ করে।
#ফলাফল:
.
এই যুদ্ধর পরে চীন আর কখনও ভারত আক্রমণ করার সাহস দেখাই নি। এই যুদ্ধর ফলেই ১৯৭১ সালে ভারত-পাক যুদ্ধতে প্রবল মার্কিন চাপ থাকলেও চীন যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকে। ১৯৭৫ সালে সিকিম ভারতভুক্ত হয় কিন্তু চীন শুধুমাত্র মৌখিক প্রতিবাদ করেই ক্ষান্ত হয় ও পরে সিকিমকে ভারতের অংশ হিসাবে স্বীকার করে নেয়।
.
●● এই ঐতিহাসিক বিজয় সম্পর্কে সকলকে জানাতে সর্বোচ্চ শেয়ার চাই।

1 comment:
😄😄😄😄😄😄
Post a Comment