সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক অস্ত্র ভান্ডার বৃদ্ধি এবং যে কোন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ভারতের বিরুদ্ধে সরাসরি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকি প্রতিরোধে ভারত সরকার তার নিজস্ব কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের একটি সুস্পষ্ট রোড ম্যাপ বা দিকনির্দেশনা প্রকাশ করেছে। পরিকল্পনা মোতাবেক ভারত পরমাণু বোমায় আক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত কোনও দেশের বিরুদ্ধে সরাসরি পারমাণবিক হামলা চালাবে না। কিন্তু কোন দেশ আগে ভারতের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র হামলা চালালে ভারতের সামরিক বাহিনী তাৎক্ষণিক ভয়াবহ পাল্টা পরমাণু আক্রমনের মাধ্যমে উপযুক্ত জবাব দিতে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে। এই সমর নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখেই ভারতের প্রতিরক্ষা বিভাগ বিশেষ করে ভারত মহাসাগর থেকে পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন থেকে পরমাণু ওভারহেড সমৃদ্ধ দূরপাল্লার ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ মধ্যম পাল্লার ট্যাকটিক্যাল ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে হামলা চালানোর একটি সুসংগঠিত এবং ভয়াবহ শক্তিশালী কাউন্টার নিউক্লিয়ার এট্যাক ক্যাপাবিলিটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং এ মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে যাচ্ছে।
মুলত আধুনিক সমরবিদ ও বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, এখনকার যুদ্ধে কোনও দেশ তার প্রতিপক্ষের উপর পারমানবিক হামলা চালালে তার ফলাফল এতটাই ভয়াবহ ও ধ্বংসাত্বক হতে পারে যে আক্রান্তের পক্ষে ঘুরে দাঁড়িয়ে পাল্টা হামলা চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে। তবে এক্ষেত্রে সামরিক গবেষকদের অভিমত, যে দেশ পারমানবিক হামলায় আক্রান্ত হয়েও দৃঢ়তার সাথে তাৎক্ষণিক পাল্টা পারমাণবিক বোমা আক্রমণের সক্ষমতা রাখে, তাকেই প্রকৃতপক্ষে পরমাণু যুদ্ধের যোগ্য অধিকারী দেশ বলে বিবেচনা করা যেতে পারে।
প্রকৃতপক্ষে ভারত এ মুহূর্তে নিজেকে উপযুক্ত পরমাণু যুদ্ধের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যাপকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। অর্থাৎ, যুদ্ধের সময় প্রতিপক্ষ দেশ ভারতে পরমাণু হামলা চালালে সঙ্গে সঙ্গে তার শক্ত দাঁতভাঙ্গা জবাব যাতে দেওয়া যায়,, তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ভারত বদ্ধপরিকর। এক্ষেত্রে সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই ব্যবস্থাকে বলা হয় ‘সেকেন্ড নিউক্লিয়ার অ্যাটাক ক্যাপাবিলিটি’। আসলে এটা মুখে বলা যত সহজ, বাস্তবে এই সেকেন্ড অ্যাটাক ক্যাপাবিলিটি কনসেপ্ট প্রয়োগ করা কিন্তু ততটাই কঠিন। একটি বিষয় আমাদের জানা উচিত যে, পরমাণু হামলা যখন কোনও দেশ চালায়, তখন বিপক্ষের স্থলসীমায় সব পরমাণু পরিকাঠামোকে একেবারেই ধ্বংস করে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই হামলা চালায়। তবে এক্ষেত্রে ভারত যেভাবে এগুচ্ছে, তাতে সে রকম ভয়ঙ্কর পরমাণু আক্রমণের মুখে পড়লেও তাৎক্ষণিকভাবে পাল্টা পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমনের মাধ্যমে শত্রুপক্ষের সামরিক মেরুদণ্ড ভেঙ্গে ফেলার অত্যাধুনিক ও উচ্চ প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জনের একেবারে দ্বারপ্রান্তে বলা চলে।
মুলত ‘সেকেন্ড নিউক্লিয়ার অ্যাটাক ক্যাপাবিলিটি’ কনসেপ্ট এর আলোকে ভারত খুব দ্রুতগতিতে তাদের নিজস্ব পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিনের সংখ্যা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিপুল পরিমান বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে যাচ্ছে যা বলার অপেক্ষা রাখে না। ভারত তার নৌবাহিনীকে নিউক্লিয়ার সাবমেরিন পরিচালনায় দক্ষ করে তুলতে ইতোমধ্যেই রাশিয়া থেকে একটি নিউক্লিয়ার পাওয়ার বেসড আকুলা ক্লাস-২ (আইএনএস চক্র)সাবমেরিন সংগ্রহ করে। যদিও চুক্তিশর্ত অনুযায়ী ভারত আইএনএস চক্রকে পারমাণবিক অস্ত্র বা ক্ষেপণাস্ত্র সজ্জিত করতে পারবে না। তবে এবার এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরেই ভারতের নৌবাহিনীতে অন্তভুক্ত হয়েছে দেশে তৈরি প্রথম উচ্চ প্রযুক্তির এডভ্যান্স নিউক্লিয়ার সাবমেরিন আইএনএস অরিহন্ত এবং পাশাপাশি এই ক্লাসের আরও একটি অত্যাধুনিক নিউক্লিয়ার সাবমেরিন (আইএনএস অরিদমন) তৈরির কাজ একেবারে শেষপ্রান্তে। এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই নিউক্লিয়ার সাবমেরিনগুলো থেকে নিশ্চিতভাবেই মধ্যম ও দূরপাল্লার ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে পারমাণবিক আক্রমন চালানো সম্ভব। এছাড়া এই শ্রেণির অত্যাধুনিক পারমাণবিক সাবমেরিনে অনেকগুলো করে পরমাণু ওয়ারহেডবাহী ক্ষেপণাস্ত্র মজুত রাখা যায়। তাই এক্ষেত্রে ভারতের শত্রুপক্ষ যে কোন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ভারতের স্থলসীমায় পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালেও, সমুদ্রের গভীরে পরমাণু অস্ত্র নিয়ে লুকিয়ে থাকা ভারতীয় নিউক্লিয়ার সাবমেরিনে আঘাত হানা প্রায় অসম্ভব। কারণ তাদের অবস্থানই নির্ণয় করা এক কথায় দূরহ। তাই স্থলভাগে হামলা হলে দ্রুতগতিতে সমুদ্র ফুঁড়ে পাল্টা ছুটে যাবে পারমাণবিক ওয়ারহেডবাহী কৌশলগত মধ্যম ও দূরপাল্লার ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবংতা হবে শত্রুরাষ্ট্রের অস্তিত্বের জন্য হতে পারে ভয়ানক বিপদজনক। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের সামরিক গবেষেণা সংস্থা ডিআরডিও ভূমি ভিত্তিক লং রেঞ্জ কে-৪ ব্যালেস্টিক মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমের সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করায় অদূর ভবিষ্যতে শত্রু পক্ষের ৮০% ব্যালেস্টিক ক্ষপনাস্ত্রের আক্রমণ দক্ষতার সাথে প্রতিহত করতে সক্ষম হবে বলে আশা করা যায়।
1 comment:
সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের সামরিক গবেষেণা সংস্থা ডিআরডিও ভূমি ভিত্তিক লং রেঞ্জ এওএডি/পিএডি এন্টি ব্যালেস্টিক মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমের সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করায় এবং রাশিয়া থেকে ৬.২০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের শক্তিশালী এস-৪০০ সারফেস টু এয়ার মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম সংগ্রহের বিষয়টি চুড়ান্ত করায় অদূর ভবিষ্যতে শত্রু পক্ষের ৮০% ব্যালেস্টিক ক্ষেপনাস্ত্রের আক্রমণ দক্ষতার সাথে প্রতিহত করতে সক্ষম হবে বলে আশা করা যায়। এছাড়া ভারত ও ইসরাইলের যৌথ প্রযুক্তিতে তৈরি শক্তিশালী বারাক-৮ এর একাধিক সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে যা ভবিষ্যতে ভারতকে ১০০% মিসাইল প্রুফ দেশে পরিনত করবে।
Post a Comment