১৯৮২সালে আর্জেন্টিনা দক্ষিন আর্টলান্টিক মহাসাগরের ব্রিটিশ অধিকৃত দ্বীপ ফাকল্যান্ড অধিকার করে নেয় তখন ব্রিটিশ সরকার তাদের নৌবহর কে আর্জেন্টিনার সাথে যুদ্ধ করতে পাঠায়। ব্রিটিশ নৌবহরের শক্তিশালী ড্রেস্টায়ার HMS Sheffield এর মুখোমুখি যুদ্ধ শুরু হয় আর্জেন্টিনা নেভির একটি যুদ্ধবিমানের সাথে। যুদ্ধবিমান টি ব্রিটিশ ডেস্ট্রয়ার লক্ষ্য করে ছুড়ে দেয় একটি এয়ার লঞ্চ এন্টি শিফ মিসাইল। নিদিষ্ট লক্ষ্যে মিসাইল টির আঘাত হানার কিছুক্ষনের মধ্যেই সলিলসমাধি ঘটে ব্রিটিশ দের গর্বের ড্রেস্টয়ার টির। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় আলোড়ন ফেলে দেয় এই ঘটনা। বারে বারে সংবাদ মাধ্যমের শিরনামে উঠে আসতে থাকে একটাই নাম। "Exocet এন্টি শিফ মিসাইল।"
তবে এই মিসাইলের কেরামতি এইখানেই শেষ হয় না। ১৯৮৭সালে ইরাক-ইরান যুদ্ধে একটি ইরাকি মিরাজ এফ-১ যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া এই মিসাইলের আঘাতে ব্যাপক ক্ষতি গ্রস্ত হয় মার্কিন নেভী ফ্রিগেট USS Stark। ফলস্বরুপ, ৩৭জন মার্কিন সেনার মৃত্যু হয় ও ২১জন আহত হয়।বিশ্বের একটি অন্যতম এন্টি শিফ মিসাইল হয়ে ওঠে Exocet মিসাইল।
.
Exocet কথাটি একটি ফরাসি শব্দ যার অর্থ হলো উড়ন্ত মাছ। ১৯৬৭সালে ফ্রান্সের নোডা কোম্পানি এই মিসাইল টিকে প্রস্তুত করে ও ১৯৭৯ সালে এটি সার্ভিসে আছে। ৬৭০ কিলোগ্রাম ওজনের এই মিসাইল টির লেন্থ ৪.৭মিটার ও এটি ১৬৫কিলোগ্রাম বিস্ফারণ বহন করতে সক্ষম। এই মিসাইল টিতে ইঞ্জিন হিসাবে সলিড ফুয়েট রকেট ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে ফলে এর সর্বোচ্চ গতি হলো ০.৯৩ ম্যাক বা ১১৩৪কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায়। এই মিসাইলের রেঞ্জ হলো যথাক্রমে ৪২কিমি থেকে ১৮০কিমি পর্যন্ত। এই মিসাইল টিকে ইন্টারটাইল নেভিগেশান গাইডেড সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে এবং টার্গেটের ১২থেকে ১৫ কিলোমিটার মধ্যে চলে আসার পর এটির এক্টিভ রেডার গাইডেড সিস্টেম সক্রিয় হয়ে যায়। তবে এই মিসাইলের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এটির লো ফ্লাইট এল্টিটিউড ফলে লক্ষ্যবস্তুর ৬০০০মিটার দুরত্বের আগে পর্যন্ত এটি কোনভাবেই শত্রুর রেডারে ধরা পড়ে না। কিন্তু এটির ওয়ারহেড বহনের ক্ষমতা কম হওয়ায় প্রধানত ছোট যুদ্ধজাহাজ যেমন, ফ্রিগেট, করভিট এর জন্য এটি দারুন কার্যকর। এই মিসাইল টির বিভিন্ন ভার্সান বর্তমানে সার্ভিসে আছে। যথা :
.
১. MM38 - এটি এই মিসাইলের সার্ফেস লঞ্চ ভার্সান। এটির রেঞ্জ ৪২কিমি।
.
২. AM38 - এটি এয়ারলঞ্চ ভার্সান।প্রধানতএ্যাটাক হেলিকাপ্টার থেকে ব্যবহারের জন্য বানানো।
.
৩.AM38 - যুদ্ধবিমান থেকে নিক্ষেপের জন্য এটি প্রস্তুত করা হয়েছে। এই ভার্সানের রেঞ্জ ৫০থেকে ৭০কিমি।
.
৪.SM39 - সাবমেরিন লঞ্চ ভার্সান এটি। সাবমেরিনের টর্পেডো টিউব থেকে নিক্ষেপ করা যায়।ওয়ারটাইট ক্যাপসুল ব্যবহার করা হয় এতে। জলের ওপরে উঠে এটির ক্যাপসুল মিসাইল থেকে আলাদা হয়ে যায় ও ইঞ্জিন চালু হয়ে যায়।
.
৫.MM40 - এটির তিনটি ভার্সান আছে। প্রধানত যুদ্ধজাহাজ ও ভুমি থেকে নিক্ষেপ যোগ্য মিসাইল।এর ব্লক-৩ ভার্সান টি ২০০৮ সালে সার্ভিসে আসে এতে টার্বোজেট ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে যার রেঞ্জ ১৮০কিমি।
.
বতর্মানে এই মিসাইলের প্রস্তুতকর্তা সংস্থা MBDA ফ্রান্স ছাড়াও বিভিন্ন দেশের জন্য ৪০০০টিরও অধিক এই মিসাইল বানিয়েছে। ফ্রান্স থেকে কেনা ভারতের স্করপিয়ন ক্লাস সাবমেরিন গুলির প্রধান অস্ত্র হলো এইExocet মিসাইল।

No comments:
Post a Comment