Saturday, 21 May 2016

Operation Diamond

♠~~Operation Diamond ~~♠ . . দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শুরু হয় সোভিয়েত ইঊনিয়ন ও আমেরিকার মধ্যে ঠান্ডা যুদ্ধ ও সেই সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রস্তুত করে মিগ-২১ নামে এক অসাধারণ যুদ্ধবিমান। যাতে টুমান্সকাই আর-২৫ টার্বোজেট ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছিল যা ১৫৬৫০এলবিএফ শক্তি উৎপন্ন করতো ফলে যুদ্ধবিমান টির গতি ছিল প্রায় ২ম্যাক ও ম্যানওভ্যারিটি ছিল অসাধারণ। . ১৯৬০সালের দিকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ এই যুদ্ধবিমান ব্যবহার করা শুরু করে যেমন, সিরিয়া, মিশর ও ইরাক। স্বাভাবিক ভাবেই এইসব দেশের প্রধান লক্ষ্য ছিল, সদ্য স্বাধীন হওয়া ইজ্রাইলকে ধ্বংস করা ফলে ইজ্রাইলের সরকারের প্রধানরা নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে ও তাদের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ কে মিগ-২১ যুদ্ধবিমানের শক্তি ও দুর্বলতা ব্যাপারে সব তথ্য সংগ্রহ করার নির্দেশ দেয়। মোসাদ একটি দু:সাহসিক অপারেশনের পরিকল্পনা গ্রহন করে যাতে অত্যন্ত গোপনে মিশরীয় বায়ুসেনার একটি মিগ-২১ যুদ্ধবিমান চুরি করে ইজ্রাইলে নিয়ে আসা হবে। এই অপারেশন টির কোড নেম দেওয়া হয় " অপারেশন ডাইমন্ড "। . প্রথমে মোসাদ তাদের একজন এজেন্ট কে মিশরে পাঠায় এই অপারেশন সম্পর্ন করার জন্য কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সে ধরা পড়ে যায় ও মিশন ব্যর্থ হয়। তবে মোসাদ এর কিছুদিন পরে আবার চেষ্টা চালায় ও দুইজন ইরাকী পাইলট কে টাকা খাইয়ে হাত করে নেয় কিন্তু শেষ সময়ে একজন পাইলট বেঁকে বসে ফলে আবার ও অপারেশন ব্যর্থ হয়। . তবে মোসাদ এতে দমে না গিয়ে সঠিক সময়ের অপেক্ষা করতে থাকে ও ১৯৬৪সালে দিকে একজন ইরাকি বংশভুত মহিলা এজেন্ট কে এই অপারেশনের দায়িত্ব দেয়। অত্যন্ত সুন্দরী ও বুদ্ধিমান এই মহিলাটি ইরাকি বায়ুসেনার কর্মীদের সাথে ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব পাতায় ও শেষে " মুন্নির রেডফা " নামে এক ইরাকি পাইলট কে এই অপারেশনের জন্য উপযুক্ত বলে মোসাদ কে জানায় কারন ধর্মীয় কারনে রেডফার সেনাবাহিনীতে পদন্নোতি হচ্ছিল না তাই সে চাকরি ছেড়ে দেবে বলে ঠিক করেছিল। মোসাদের নির্দেশে সেই মহিলা এজেন্ট রেডফা রে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ইউরোপে নিয়ে আসে ও মোসাদের সাথে তার যোগাযোগ করিয়ে দেয়। মোসাদ তাকে ১০লক্ষ মার্কিন ডলার ও তার পরিবার সহ তাকে তেল আবিরে পুনর্বাসনের প্রস্তাব দেয় যা রেডফা সহজেই গ্রহন করে নেয় ও মোসাদ তাকে পরিকল্পনার ব্যাপারে বিস্তারিত বুঝিয়ে আবার মিশরে পাঠিয়ে দেয়। রেডফা আবার তার কাজে যোগ দেয় ও সুযোগের অপেক্ষা করতে থাকে। . ১৬আগস্ট, ১৯৬৬ রেডফা তার সুবর্ন সুযোগ পেয়ে যায় যখন জর্ডনের ট্রেনিং মিশনের জন্য ভর্তি ট্যাঙ্কি সহ একটি মিগ-২১ এর পাইলট হিসাবে তাকে নিযুক্ত করা হয়। মিগ-২১ সহ আরো কিছু ইরাকি বায়ুসেনার যুদ্ধবিমান জর্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা হয় কিন্তু ইরাকের আকাশ সীমা অতিক্রম করে বিমান গুলো জর্ডনের আকাশ সীমায় প্রবেশ করার কিছুক্ষণ পরেই রেডফা তার মিগ-২১ নিয়ে ফর্মেশন ভেঙ্গে ইজ্রাইলের দিকে চলে যায়। জর্ডনের কর্তিপক্ষ রেডফা কে সতর্ক করে কিন্তু রেডফা তাদের কথায় কান না দিয়ে পরিকল্পনা অনুসারে নিজের কাজ করতে থাকে। জর্ডন দ্রুত ব্যবস্থা নেয় ও তাদের বায়ুসেনার দুইটি হান্টার যুদ্ধবিমান কে মিগ-২১টির পিছনে লাগিয়ে দেয় ফলে রেডফা জর্জনের আকাশ সীমা পার হতে বাধাপ্রাপ্ত হয় এদিকে মিগ-২১এর জ্বালানিও প্রায় শেষ হতে থাকে। কিন্তু মিগ-২১ এর সর্বোচ্চ গতির কাছে হান্টার দুইটি হার মানে ফলে জর্ডন তাদের এন্ট্রি এয়ার ডিফেন্সের ব্যবহার করে কিন্তু সেটিও লক্ষ্যভেদ করতে ব্যর্থ হয়। রেডফা তার মিগ যুদ্ধবিমান টি নিয়ে সুরক্ষিত ভাবেই ইজ্রাইলের আকাশ সীমায় প্রবেশ করে ও ইজ্রাইলের বায়ুসেনার দুটি মিরাজ যুদ্ধবিমান মিগ কে পথ দেখিয়ে হাটজার বিমানবন্দরে নিয়ে আসে। . আন্তর্জাতিক মহলে এই ঘটনার পর আলোড়ন পড়ে যায়, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ইরাক উভয়ই ইজ্রাইলের কাছে তাদের মিগ যুদ্ধবিমান টি ফেরত চায় যা ইজ্রাইল অস্বীকার করে। ইজ্রাইলের পাইলট রা এরপর মিগ-২১ টি চালিয়ে এর বৈশিষ্ট্য ও গতিবেগ সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারনা পেয়ে যায় যা তাদের ছয়দিনের যুদ্ধের সময় ব্যাপক ভাবে কাজে লাগে। ১৯৬৮সালে ইজ্রাইল আমেরিকাকে এই মিগ-২১টি লিজে দিয়ে দেয় যা আমেরিকা তাদের দেশে নিয়ে যায় ও যন্ত্রপাতি খুলে বিভিন্ন রুশ প্রযুক্তি হস্তগত করে ও পরে আবার যুদ্ধবিমান টি ইজ্রাইল কে ফেরত দিয়ে দেয়। আজও ইজ্রাইল এয়ার ফোর্সের মিউজিয়ামে এই মিশরীয় মিগ-২১ যুদ্ধবিমান টি সাজিয়ে রাখা আছে মোসাদের এক অনন্য কীর্তির নিদর্শন হিসাবে।

No comments: